Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বছরব্যাপী মানসম্মত পেয়ারা উৎপাদন

পেয়ারাকে অনেকে গরিবের আপেল বলে থাকেন। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষ হয় এবং এর মোট উৎপাদন ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। আর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের কাছে পেয়ারা এখন স্বপ্নের বীজ বপনের মতো একটি বিষয়। পেয়ারা উৎপাদনে যেভাবে কৃষক সাড়া দিচ্ছে তা অকল্পনীয়। পেয়ারার গুণাগুণ আপেলের থেকে কোনো অংশেই কম নয়। পেয়ারাতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা মানবদেহের গঠন ও বৃদ্ধিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পেয়ারার গুণের শেষ নেই। এতে আছে ভেষজ গুণ। পেয়ারার শিকড়, গাছের বাকল, পাতা এবং অপরিপক্ব ফল এগুলো কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের পীড়া নিরাময়ে ভালো কাজ করে। এছাড়া ক্ষত বা ঘা জাতীয় জায়গায় থেঁতলানো পাতার প্রলেপ দিলে খুব উপকার পাওয়া যায়। পেয়ারা পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা দূর হয়। পেয়ারা থেকে জ্যাম, জেলি, আচার, আইসক্রিম প্রভৃতি তৈরি হয়। পেয়ারার পাতা থেকে চা তৈরি করা যায় যা স্বাস্থের জন্য খুব ভালো।
 

সাধারণত বছরে দুইবার পেয়ারা হয়, একবার বর্ষাকালে, আরেকবার শীতকালে। বর্ষাকালে পেয়ারার উৎপাদন শীতকালের চেয়ে বেশি হয়। তবে বর্ষার সময় আবহাওয়াতে জলীয়ভাব বেশি থাকার জন্য মিষ্টতা কম থাকে। তাছড়াও জলীয় ভাব বেশি থাকার দরুন পাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে বাজারে তেমন দর পাওয়া যায় না। সব জাতের পেয়ারার ক্ষেত্রেই শীতকালে গুণাগুণ বেড়ে যায়, ফলের আকৃতি ও রঙ ভালো হয়, রোগ এবং পোকার আক্রমণ কম হয়, ফলে বাজারদর খুব ভালো থাকে। তবে উন্নত কিছু কৌশল বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেয়ারার মান সম্মত উৎপাদন করা সম্ভব। পেয়ারাতে ব্যাগিং করে, জোড় কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে এবং নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে ফল ধরা নিয়ন্ত্রণ করে এর ফলন কাক্সিক্ষত সময়ে করানো যায় এবং সহজে বাজারজাত করে লাভ বেশি পাওয়া যায়।
 

পলিব্যাগ ব্যবহার বা পেয়ারাতে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার
পলিব্যাগ ব্যবহার করে মানসম্মত পেয়ারা উৎপাদন করা যায় এবং পেয়ারা চাষে সেসব সমস্যা থাকে সে সমস্যা দূর করা যায়। প্রযুক্তিটি হচ্ছে পেয়ারা ফল পলিথিনের প্যাকেট দিয়ে প্রথমে ঢেকে দিতে হয়। এতে ফল পোকার আক্রমণ থেকে বেঁচে যাবে এবং ফলের রঙ, মান ও বাজার মূল্য বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে পলিথিনের ব্যাগটি ফলের বোঁটার সাথে হালকা করে বেঁধে দিতে হবে এবং ফলের নিচের দিকে পলিথিনের মুখটি খোলা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি সতর্কতা আছে সেটি হলো পলিথিনের নিচে কয়েকটি ছিদ্র করে দিতে হবে যেন পলিথিনের ভেতরে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে এবং জমাকৃত পানি বের হয়ে যেতে পারে। কারণ পেয়ারা থেকে যে পানি প্রস্বেদন হয় সেটি ভেতরে জমা থাকলে সেখান থেকে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। পেয়ারা মার্বেলের চেয়ে একটু বড় হলেই ব্যাগ পরানো হয়। ব্যাগিং করলে মাছি পোকা ফলের গায়ে বসে না সেজন্য ফল ভালো থাকে আর সরাসরি কীটনাশক পেয়ারাতে পড়ে না, তাই স্বাস্থ্যসম্মত পেয়ারা পাওয়া যায়। পেয়ারা উৎপাদন ও ফলনে ব্যাগিং পদ্ধতি এক নবদিগন্তের যাত্রা শুরু করেছে।

 

পেয়ারা গাছের কুশিভাঙা
সাধারণত বৈশাখ মাসে পেয়ারার চারা লাগানো হয়। এরপর গাছ ৮-৯ মাস বয়সের গাছে ফল আসে এবং অতিরিক্ত বৃদ্ধি কমানো এবং ডাল সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য কুশি ভেঙে দেয়া হয়। কুশি ভাঙার ২০-২৫ দিনের মধ্যেই নতুন অতিরিক্ত কয়েকটি কুশি আসে। আর যত বেশি কুশি আসবে তত বেশি ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিবে।

 

জোড় কলমের মাধ্যমে
পেয়ারা একটি সম্ভাবনাময় ফসল। অনেক চাষিই আজ প্রতিষ্ঠিত এ ফল চাষ করে। সাধারণত বীজ থেকে উৎপাদিত চারা দ্বারাই আমাদের দেশে এর চাষ হয়ে থাকে। তবে এখন বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন করে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে উন্নত জাত সৃষ্টি করে তা কৃষকের মাঝে বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। বীজ থেকে যেন তেন ভাবে গজানো চারা ব্যবহার করে ফলের গুণগতমান কমে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢলে পড়া বা উইল্টিং রোগ পেয়ারা চাষের জন্য একটি অন্তরায়। তাই জোড় কলমের মাধ্যমে উইল্টিং প্রতিরোধী গাছ তৈরি করে পেয়ারার সফল উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পলি পেয়ারা, আঙুর পেয়ারা এবং স্ট্রবেরি পেয়ারার জাতের চারাকে আদিজোড় হিসেবে ব্যবহার করে পেয়ারার উইল্ট রোগ এড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে আঙুর পেয়ারার বীজের চারা অনেক চিকন হয় বলে জোড় কলমের ক্ষেত্রে পলি পেয়রা ও স্ট্রবেরি পেয়ারা বীজের চারাকে আদিজোড় হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।

 

 নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে তিনভাবে ফল ধরা নিয়ন্ত্রণ করে পেয়ারা উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব-
ক. মৌসুমি ফল উৎপাদনের সময়ে কিছু ফুল ও ফল ছিঁড়ে দিয়ে অমৌসুমি ফল ধরাকে উৎসাহিত করে;
খ. সার, পানি ও হরমোন প্রয়োগ কাক্সিক্ষত মাত্রায় ব্যবহার করে;
গ. ব্যান্ডিং বা বাঁকানো পদ্ধতি ব্যবহার করে।

 

ফুল ও ফল ছিঁড়ে ফল ধরা নিয়ন্ত্রণ
বর্ষাকালের ফলন পুরোপুরিভাবে বন্ধ করতে পারলে বা কমাতে পারলে শীতকালের ফলন অনেকটা বাড়ানো যায়। এজন্য বসন্তকালে গাছের চারদিকের মাটি খুঁড়ে শিকড় বের করে দিতে হবে। এরপর ১৫-১৬ দিন এভাবে রাখার ফলে সব পাতা হলদে হয়ে ঝড়ে পড়ে। এরপর গাছের গোড়ায় বিভিন্ন জৈব এবং অজৈব সার দিয়ে সেচ দিতে হবে। ফলে বর্ষার সময় নতুনভাবে ডালপালা ও ফুল ধরে। এছাড়াও এপ্রিল-মে মাসে সেগুলোকে ছিঁড়ে দিলে বর্ষায় ফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এরপর আগস্ট-অক্টোবর মাসে প্রচুর ফুল আসে এবং শীতের সময় অধিক হারে পেয়ারা পাওয়া যায়। তবে এ পদ্ধতি ব্যয়বহুল ও সময়সাধ্য।

 

হরমোন প্রয়োগ
হরমোন গাছে স্প্রে করে এপ্রিল-মে মাসের ফুল নষ্ট করে পেয়ারার উৎপাদন বাড়ানো যায়। এপ্রিল-মে মাসে গাছে যখন ফুল আসে সেই সময় ২, ৪-ডি (১০০ লিটার পানিতে ১.৫ থেকে ২ গ্রাম) অথবা ন্যাপথেলিন এসিটিক এসিড (১০০ লিটার পানিতে ১০-১২ গ্রাম) অথবা ইউরিয়া ১০% ভালো সলুশন করে ফুলের ওপর ছড়িয়ে দিলে শতকরা ৭০ ভাগ ফুল ঝরে পড়ে। ফুল ঝরার সাথে সাথে এ হরমোনগুলোর ব্যবহারে গাছে আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ২-৩ গুণ ফুল বেশি আসে। হরমোন খুব সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় ফলে খুব একটা খরচ হয় না। হরমোন প্রয়োগের ফলে ফলের মিষ্টতা, ভিটামিন ‘সি’ প্রভৃতি গুণাগুণ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়ে তোলে।

 

ব্যান্ডিং বা শাখা-প্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতির মাধ্যমে অসময়ে ফল ধারণ
শাখা-প্রশাখা বাঁকানোর মাধ্যমে পেয়ারার অসময়ে বা সারা বছর ধরে ফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গাছের বয়স দেড় বছর থেকে দুই বছর হলেই এ পদ্ধতি শুরু করতে হয় এবং ৫-৬ বছর পর্যন্ত এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। সাধারণত বছরে দুইবার এ পদ্ধতিতে পেয়ারার ফুল ও ফল নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সাধারণত এপ্রিল-জুন মাস পর্যন্ত একবার বাঁকানো হয়। আর সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে দ্বিতীয়বার ডাল বাঁকানো হয়। ডাল বাঁকানোর ১০-১৫ দিন আগে সার ও পানি দিতে হবে। ডাল বাঁকানোর সময় শাখাটির অগ্রভাগের প্রায় এক-দেড় ফুট মতো পাতা ফুল ফল রেখে বাকি অংশের পাতা, ফুল ফল ও ছোট ডাল কেটে ফেলতে হয়। এভাবে সব শাখা-প্রশাখা গুলোকে তৈরি করে নেয়া হয়। এরপর সুতলি দিয়ে গাছের ডালের মাথায় বেঁধে গাছের শাখা-প্রশাখাগুলোকে বেকিয়ে গাছের কা-ের সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয়। এছাড়া মাটিতে খুঁটি পুঁতে খুঁটির সাথেও বেঁধে দেয়া যেতে পারে। এপ্রিল থেকে জুন সময়ে ডাল বাঁকানোর ১০-১২ দিন পর নতুন ডাল বের হয়। নতুন ডাল ১ সেমি. মতো হলে বাঁধা জায়গা খুলে দেয়া হয়। আবার সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর ডাল বাঁকানো হলে ডাল বাঁকানোর ২০-২৫ দিন পরে নতুন ডাল গজাতে শুরু করে। সাধারণত ডাল বাঁকানোর ৪৫-৬০ দিন পরে ফুল ধরতে শুরু করে।

 

সাধারণত নতুন ডালে দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ জোড়া পাতার কোলে ফুল আসে। আর ডাল বাঁকানোর পরে যদি বৃষ্টি আসে বা আর্দ্র আবাহাওয়া ৩-৪ দিন থাকে তাহলে নতুন ডালের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে যার ফলে ফুলহীন অঙ্গজ বৃদ্ধি ঘটে। এভাবে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ডাল বাঁকানো হলে ফল পাকতে শুরু করে অক্টোবর-জানুয়ারি মাসের মধ্যে। আবার সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে ডাল বাঁকানো হলে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ফল পাকে। এ সময়ের ফল মিষ্টি হয় ও অন্যান্য সব গুণাগুণ বেশি থাকে। ফলের আকৃতি, রঙ সুন্দর হওয়ায় এ সময়ের পেয়ারার বাজরদর ভালো পাওয়া যায়।

 

কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি*

*আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী; মোবাইল : ০১৮১৯৯২২৬১৩


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon